"ভ্রমনের বিড়ম্বনা দেশে-দেশে" / Travel Embarrassment country Wide :—**************************************************************************************
#গন্তব্য ঢাকা--উজবেকিস্তান/তাশখন্দ এয়ারপোর্ট :--*********************************************
( উজবেকিস্তান-তথ্য:-
আয়তন ৪,৪৭,৪০০ বর্গকিলোমিটার যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪ গুন।লোক সংখ্যা ৩ কোটির কিছু বেশী।বলা যায় বাংলাদেশের চেয়ে ৫ গুন কম। )

১৯৯৯ সালের শেষের দিকে আটাব-ATAB (Association of Travel Agent’s of Bangladesh ) এর মার্কেটিং কনফারেন্সে যোগদিতে উজবেকিস্কানের রাজধানী তাসখন্দের উদ্দেশ্যে প্রায় শতাধিক ট্রাভেল এজেন্সীর মালিক/পরিচালক আটাবের প্রেসিডেন্ট ডা: এইচ বি এম ইকবাল এম,পি,এর নেতৃত্বে ঢাকা থেকে উজবেকিস্তান এয়ারলাইন্স করে রওয়ানা দিই।
আটাব চট্রগ্রাম এর প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব এমদাদ উল্লার নেতৃত্বে প্রায় ২০ জন সদস্য আমরা চট্রগ্রাম থেকে যোগদান করি। সদ্য স্বাধীন দেশ যারা সম্প্রতি রাশিয়া ব্লগ থেকে বের হয়ে নতুন নামকরন হয়েছে উজবেকিস্তান।

ইমাম বুখারি (রঃ) এর সমাদি সৌধে লেখক হারুন-অর রশিদ/সমরখন্দ/উজবেকিস্তান-১৯৯৯
উজবেকিস্তান মূলত মুসলিম প্রধান দেশ।সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত থাকাকালীন সময়ে ছোটবেলা থেকে তাশখন্দ,সমরখন্দের নাম শুনে এসেছি।সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কারনে তাসখন্দে তৎকালীন চলচিত্র সম্মেলনে পৃথিবীর চলচিত্র জগতের তাবৎ সব বড় বড় নামকরা কলা-কৌশলীরা নিয়মিত যোগদান করতেন।এছাড়া অবিভক্ত ভারতে মোগলদের আবির্ভাব কিন্তু এই তাশখন্দ থেকেই।বলা যায় ইতিহাস ঐতিহ্যে তাশখন্দ একটি উল্লেখযোগ্য নাম।

ছবি-১৯৯৯।
এছাড়া মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় আবেগ জড়িয়ে আছে এই উজবেকিস্তানকে ঘিরে।উজবেকিস্তানেরই আরেকটি বড় নগরী সমরখন্দে শায়িত আছেন বিশ্বখ্যাত হাদীছ সংগ্রাহক হযরত ইমাম আবু-আল বুখারী(র:)।স্বভাবতই উজবেকিস্তানে ভ্রমন নিয়ে আমার উতৎসাহটা একটু বেশী ছিল।

ঢাকা থেকে তাসখন্দের দূরত্ব প্রায় ২,৭৬২ কি:মি:এবং মাত্র ৪ ঘন্টা আকাশ ভ্রমন শেষে যথাসময়ে বিমান তাশখন্দ এয়ারপোর্টে অবতরন করে।প্লেন থেকে নেমে সবাই ইমিগ্রেশনে লাইনে দাড়িয়ে গেলাম।আমরা On Arrival ভিসা নিয়ে উজবেকিস্তানে ঢুকব।যেহেতু আমাদের সাথে একজন সরকারী দলের পার্লামেন্ট সদস্য আছেন।তাই বাংলাদেশ এমবেসীর লোকজনও উপস্হিত আমাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য।প্রতিটি পাসপোর্টে Arrival শীল মেরে একে একে প্রায় সকলেই ইমিগ্রেশন শেষ করে চলেছেন ।আমরা বেরিয়ে পড়ব সবাই এক সাথে এরই মধ্যে ঘটে বড় বিপত্তি।আমাদের সাথের এক সদস্যের পাসপোর্টের মেয়াদই চলে গেছে প্রায় মাস খানেক আগে যা ঢাকার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে যায়।কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ন পাসপোর্ট দিয়ে তারা এদেশে ঢুকতে দিবেনা।বড়ই বিড়ম্বনায় পড়ে গেলাম আমরা।

এ অবস্হায় সহযাত্রীকে ছাড়তে নেয়া হলো বিশেষ ব্যাবস্থা।বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা শেষ পর্যন্ত এয়ারপোর্ট বসেই পাসপোর্ট নবায়নের ব্যবস্হা করলেন।অর্থাৎ দূতাবাসের অফিস থেকে শীল সহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এনে এয়ারপোর্টে নবায়নের ব্যবস্তা করে দিলেন।এতে আমাদের যাত্রা বেশ বিলম্বিত হয় এবং অহেতুক অনভিপ্রেত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে হয় শুধুমাত্র বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অফিসারের চরম গাফিলতির কারনে।
-----------********------------*********-----------***********-----------***********----------------

#গন্তব্য (Penang)“পেনাং” থেকে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক “ডন মাং” (Don Mueang) এয়ারপোর্ট:-************************************************************************************
(থাইল্যান্ড- তথ্য:-
থাইল্যান্ডের আয়তন ৫,১৩,১২০ বর্গ কিলোমিটার যা বাংলাদেশের চেয়ে সাড়ে তিনগুন বেশী।কিন্তু জনসংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে অর্ধেকেরও কম প্রায় ৭ কোটি।)
২০১৫ সালের মাঝামাঝি মালয়েশিয়া ভ্রমনের শেষের দিকে কুয়ালালামপুর থেকে বাসে করে সমুদ্র বন্দর পেনাং(Penang) যাই।পেনাং একাধিক দ্বীপে ঘেরা খুবই আকর্ষনীয় একটি পর্যটন কেন্দ্র।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পর্যটক এখানে আসে।নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য এটি নি:সন্দেহে আদর্শ জায়গা।যারা মালয়েশিয়া ভ্রমনে আসেন তাদের প্রতি পরামর্শ পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই দ্বীপে একবার ঘুরে যেতে পারেন।মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে মাত্র ৪ ঘন্টায় বাসে কিংবা অন্য বাহনে করে সহজে পেনাং আসা যায়।

চাইলে বিমানেও আসা যায়।চলাচলের রাস্তা খুবই প্রশস্হ ,চমৎকার এবং নির্ঝন্ঝাট বলা চলে।পেনাংয়ে ৩ দিন অবস্থানের পর ব্যাংকক যাব এ লক্ষ্যে যাত্রার একদিন আগে এয়ার এশিয়ার দুটি টিকেট কিনলাম আমি আর আমার সফর সংগী মি:মান্নানের জন্য। দুরত্ব প্রায় ১০০০ কি:মি:।দুই ঘন্টায় পেনাং থেকে ব্যাংকক যাওয়া যায়।প্রতিদিন এয়ার এশিয়ার একাধিক ফ্লাইট চলাচল করে।সকাল ১১ টায় ফ্লাইট ।

ছবি-২০১৩।
তাই সকাল ৮ টায় আমি আর মি: মান্নান একসাথে বেরিয়ে পড়ি।আমরা এয়ারপোর্ট গামী বাসে উঠি।এগুলো চলাচলের জন্য খুবই উপযোগী।সরকারী নিয়ন্ত্রনাধীন এই পাবলিক পরিবহন গুলোর সার্ভিস অত্যন্ত চমৎকার।প্রতি ৫ মিনিট পর পর গাড়ী আসে ।যাত্রী যাই হোক সিট ক্যাপাসিটির ভিত্তিতে এগাড়ী গুলো চলে।যাত্রীর জন্য বসে থাকেনা।অতিরিক্ত যাত্রী নেবার কোন সুযোগ নেই।বাস গুলোতে প্রতিবন্দীদের জন্য নির্দিষ্ট আসন গুলো সব সময় রিজার্ভ থাকে।

গাড়ীতে প্রচুর বিদেশী পর্যটক।যাত্রাপথে আমাদের পার্শবর্তী সিটের এক মহিলা পর্যটকের সাথে কথোপকথনে পরিচয় হয়।বলা যায় খুবই স্মার্ট মহিলা সাথে ৫/৭ বছরের দুটি ছোট ছোট বাচ্চা।ভাল ইংরেজী জানেন ।কথার ফাঁকে জানা যায় মহিলাটি এসেছেন মিশরের বিখ্যাত শহর আলেকজান্দ্রিয়া থেকে।সম্প্রতি তার স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয়েছে।মালয়েশিয়ায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্স ভিসার জন্য আবেদন করেছেন তাই অপেক্ষায় আছেন।এভাবে কথা বলতে বলতে তার গন্তব্য “জর্জটাউন” এসে গেলাম।আমাদের আমন্ত্রণ জানালেন গাড়ী থেকে নেমে কফি পানের।যেহেতু আমাদের গন্তব্য এয়ারপোর্ট তাই কফি পানের আমন্ত্রণ বিনয়ের সহিত ফিরিয়ে দিলাম।দেখে মনে হলো তিনি খুব হতাশ হলেন।আমরা গাড়ী থেকে তাকে বিদায় জানালাম।
""জর্জটাউন"“ জাতিসংঘ ঘোষিত ওয়ার্লড হেরিটেজ এর অন্তরভূক্ত ।এই শহরের নির্মান শৈলী আর স্হাপনা যেন শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় গড়া।বৃটিশ স্থাপত্য অনুসরনে তৈরী এটি একটি অনেক পুরনো শহর।পর্যটকদের আকর্ষনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু এই “ জর্জটাউন “।সমুদ্র বন্দর পেনাং এর মুল শহর এই “জর্জটাউন”।

# গন্তব্য দুবাই থেকে ইস্তাম্বুল হয়ে এথেন্স (গ্রীস) ভাই আইয়ুব খানের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে:-
( গ্রীস- তথ্য:-
আয়তন ১,৩১,৯৯০ বর্গকিলোমিটার প্রায় বাংলাদেশের কাছাকাছি।জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি বিশ লক্ষ বা বাংলাদেশের চেয়ে ১৪ গুন কম।)
১৯৮৯ সালের কথা।আমার এক ভাই আইয়ূব খান আবুধাবী গ্রীস এমবেসী থেকে ভিসা নিয়ে এথেন্সের উদ্দেশ্যে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে ভায়া ইস্তাম্বুল হয়ে রওয়ানা দেন।যদিওবা তাহার ইউএই এর রেসিডেন্স ভিসা ছিল।তবুও গ্রীস যাত্রা করলেন এই ভেবে যদি ভাল লাগে থেকে যাবেন না হয় আবার আবুধাবী ফিরে এসে কাজে যোগদান করবেন।যাত্রা পথে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে তুরস্কের অন্যতম প্রধান নগরী ইস্তাম্বুলে প্রায় ৮ ঘন্টার বেশী যাত্রা বিরতি।ট্রানজিট পয়েন্টে যাত্রীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জমা রাখলেন এই বলে ফের এথেন্স যাত্রার মুহূর্তে তাদের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়া হবে।

ট্রানজিট পয়েন্টে এরকম অনেক লোক আছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কানেকটিভ ফ্লাইট ধরার অপেক্ষায়।যথারীতি এথেন্স রওয়ানা হবার সময় হল।লাউড স্পীকারে এবং টিভি স্ক্রীনে ঘোষনা এলো এথেন্স গামী যাত্রীদের বোর্ডিং লাউন্জে সমবেত হওয়ার জন্য।
এ ঘোষনার পর ট্রানজিট পয়েন্টে বোর্ডিং কার্ড প্রদর্শন করে তাহার পাসপোর্ট ফেরত চাইলেন।বিধিবাম!দায়িত্বরত অফিসার অনেকক্ষন খোজাখুজি করেও তাহার পাসপোর্টের কোন হদিছ করতে পারলেন না।রীতিমত ব্যাপারটি নিয়ে এয়ারপোর্টে তোলপাড় পড়ে গেল।যেহেতু তাহার পাসপোর্টে দুই দেশের ভিসা লাগানো ।তাই এই পাসপোর্ট আলাদা মূল্য বহন করে।তখন পাসপোর্টে ফটো পরিবর্তন করে সহজে যেই কেউ একদেশ থেকে অন্যদেশে আসা যাওয়া করতে পারত।অনুমান করা যায় এয়ারপোর্টেরই কোন এক সংঘবদ্ধ চক্র এই পাসপোর্ট চুরির পেছনে জড়িয়ে আছে।
যেহেতু এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাসপোর্ট রক্ষিত ছিল তাই স্বভাবতই দায় দায়িত্ব এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায়।ইতিমধ্যে আইয়ুব খান ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্ট থেকে টেলিফোনে দেশে আমাদের সবার বড় ভাই মরহুম আলহাজ্ব ইউনুছ মিয়াকে ফোন করে তার এই দূর্ঘটনার বর্ননা করে পরামর্শ চান এ অবস্হায় কি করা যায়।
উল্লেখ্য আমাদের বড় ভাই কিন্তু এই ট্রাভেলিং লাইনের তৎকালীন সময়ের জন্য একজন এক্সপার্ট বলা যায়।পৃথিবীর বহুদেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতা তাহার ছিল।তিনি যথাসম্ভব পরামর্শ দিয়ে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের উপর দায় চাপিয়ে পরবর্তী করনীয় নির্ধারনের পথ বাতলে দেন।এভাবে অনেক ভোগান্তির পর এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ পাসপোর্ট হারানোর দায় তাদের ঘাড়ে নিতে বাধ্য হন এবং সমাধানের বিকল্প পথে এগিয়ে যান।
যেহেতু পাসপোর্ট নাই তাই মুভমেন্ট করা দু:সাধ্য।কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে একজন দায়িত্বশীল অফিসার দিয়ে তাদের খরচে তুরস্কের রাজধানী আন্কারাস্হ বাংলাদেশ দূতাবাসে আইয়ূব খানেক নিয়ে যান এবং বিস্তারিত অবহিত করে বাংলাদেশী নাগরিক হিসাবে দিনে দিনে নতুন আরেকটি পাসপোর্ট তৈরী করে তার হাতে তুলে দেন।যেহেতু তার পাসপোর্টে কোন দেশের ভিসা নাই।তাই তাকে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে আসতে হয়। তুরস্ক ইমিগ্রেশনের কিছু লোভী দুষ্ট লোকের কারনে একজন মানুষের ইউরোপ ভ্রমনের স্বপ্ন এভাবে ভেংগে চুরমার হয়ে গেল।একটি কথা বিদেশ গামী সবাইকে সব সময় মাথায় রাখতে হবে ভ্রমনের সময় পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডক্যুমেন্ট হল সবচেয়ে জরুরী এবং মহামুল্যবান সম্পদ।পাসপোর্ট নাই তো আপনি অবৈধ অনুপ্রবেশ কারী যার ফল অত্যন্ত মারাত্মক।তাই বিদেশ ভ্রমনে সব সময় সতর্কতা বজায় রাখতে হয়।
--------******--------********----------********---------*******----------++++++-----------
*বিড়ম্বনা-১“
যথাসময়ে আমরা পেনাং বিমান বন্দরে পৌছে গেলাম।আমাদের আলাদা কোন লাগেজ নাই।শুধু হ্যান্ড লাগেজ।এয়ার এশিয়ার কাউন্টারে চেক ইন শেষে বোর্ডিং পাশ নিয়ে ইমিগ্রশনের জন্য লাইনে দাড়ালাম।দ্রুত ইমিগ্রেশন সেরে ফ্লাইটের বোর্ডিং ব্রীজে যাবার আগে কাস্টম চেক করাতে হয়।এখানে এসে বিড়ম্বনার স্বীকার হলাম।কাস্টমস চেকে দায়িত্বরত হিজাব পরিহিত মালয়েসিয়ান মহিলা হ্যান্ড লাগেজ খুলে একে একে লিকুইড সাবান,শ্যাম্পু,পারফিউম ইত্যাদি বের করে বললেন হ্যান্ড লাগেজে এসব পরিবহন করা যাবেনা ।কারন এগুলো দাহ্য পদার্থ।প্রায় কয়েক হাজার টাকার জিনিস ব্যাক্তুিগত ব্যবহারের জন্য কিনেছিলাম।অনেক অনুরোধ করলাম কিন্তু কোন ছাড় দিলেন না।অগত্যা আমরা বললাম তাহলে এসব পুনরায় লাগেজে দিয়ে আসব।তাতে তিনি সম্মতি দিলেন।
খুলে ফেলা দ্রব্যগুলো হ্যান্ড লাগেজে দ্রুত ঢুকিয়ে আবার ফিরে এলাম ইমিগ্রেশন কাউন্টারে।ওখানে ফিল্ডের দায়িত্বরত অফিসার Mr.Mydin (নামটা এখনো মনে আছে) কে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললাম এবং জানালাম কিছু নিত্য ব্যবহার্য ঘরের দ্রব্য কাষ্টম চেকিংয়ে হ্যান্ড লাগেজে এলাউ করছেনা ।তাই আমাদের পুনরায় এয়ার এশিয়ার কাউন্টারে যেতে হবে।তিনি সাথে সাথে সম্মতি দিলেন এবং আমাদের পাসপোর্ট দুটি হাতে নিয়ে উঁচু করে ধরে রেখে বললেন “আমি তোমাদের পাসপোর্ট নিয়ে এখানে দাড়িয়ে আঁছি ,তোমরা দ্রুত কাজ সেরে ফিরে এসে পাসপোর্ট নিয়ে যাবে।কোন ভয় নেই ,আমার নামটা মনে রেখ”।যেহেতু আমাদের পাসপোর্টে Exit সিল পড়ে গেছে তাই পাসপোর্ট নিয়ে পূন:প্রবেশের কোন সুযোগ নেই।তার কথা মত আমরা দ্রুত পায়ে এয়ার এশিয়ার কাউন্টারে ফিরে গিয়ে লাগেজ দিতে গেলাম।কাউন্টারটি ইমিগ্রেশন থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে ।লাগেজ দিতে গিয়ে এয়ার এশিয়া লাগেজ ভাড়া বাবত ২০০ রিংগিত দাবী করে বসে।যেহেতু এত বিড়ম্বনা শেষে এতদূর এসে গেছি তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভাড়া বাবত ২০০ রিংগিত পরিশোধ করে অত্যন্ত দ্রুততার সহিত ইমিগ্রেশনে এসে Mr.Mydin কে ধন্যবাদ জানিয়ে পাসপোর্ট ফেরত নিলাম আর সময়মত ফ্লাইটে উঠে আসন নিয়ে নিলাম।
নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট ছেড়ে দিল এবং নিরাপদে ও নির্ধারিত সময়ে আমরা ব্যাংককের “ডন মাং”এয়ারপোর্টে পৌছে গেলাম।এটা ব্যাংককের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর।এই বিমান বন্দরে এয়ার এশিয়া,মালিন্দু এয়ারলাইন্স এবং আভ্যন্তরিন ফ্লাইট অপারেট করে থাকে।ব্যাংককের মুল বিমান বন্দর” সুবর্ন ভুমি”(Suvarnabhumi Airport) আর “ডন মাং“(Don Mueang Airport ) খুব কাছাকাছি।
*বিড়ম্বনা-২“এয়ারপোর্ট নেমে ইমিগ্রেশনে দুজন দুই লাইনে দাঁড়ালাম।বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বিনা বাধায় দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে বিদায় দিচ্ছে।কিন্তু আমাদের বেলায় ইমিগ্রেশন অফিসার পাসপোর্ট দেখে অন্য এক অফিসারকে ইশারা করলেন।তিনি এসে দুজনকেই লাইন থেকে আলাদা করে পাসপোর্ট হাতে নিয়ে এক পাশে গিয়ে দাঁড়ান এবং বলেন “বাংলাদেশ,ভারত এবং পাকিস্তানী নাগরিক যারা এই রুট ব্যবহার করেন তাদেরকে ব্যাংককে ঢুকতে হলে অবশ্যই মালয়েশিয়ান ২০০০ রিংগিত বা $৫০০ডলার শো করতে হবে।অন্যথায় তাদের ঢুকতে দেয়া হবে না।”আমার পকেটে তখন নগদ$৩০০ ডলার ছিল এগুলো দেখিয়ে আমরা একটু তর্কে গেলাম এবং তাদের দেখালাম মাত্র ৩ দিন আমরা ব্যাংককে থাকব আর আমাদের ঢাকায় ফিরতি বিমান রি-কনফার্ম করা আছে তারপরও কেন অত বেশী ডলার লাগবে।তারা বলল এটাই তাদের নিয়ম।
এক পর্যায়ে আমার সংগী মান্নান পকেট থেকে ইউএই দেরহাম,সৌদি রিয়াল,মালয়েশিয়ান রিংগিত ,বাংলাদেশী টাকা এবং ডলার সহ অনেক গুলো টাকা তাহার সামনে এক সাথে তুলে ধরে বলেন আর কত টাকা দেখাতে হবে? উল্লেখ্য আমার সংগী মান্নান কিন্তু ভাল ইংরেজীতে কথা বলতে পারে।এতগুলো টাকা একসাথে দেখে তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন বলে মনে হয়।তিনি হয়ত ভেবেছিলেন আমাদের পকেটে পর্যাপ্ত টাকা নেই।পরে তিনি পাসপোর্ট আমাদের হাতে দিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে ইশারা করলেন Arrival শীল মেরে দিতে।
*বিড়ম্বনা-৩“ইমিগ্রেশন থেকে বেরিয়ে নিরাপদ যাত্রার জন্য এয়ারপোর্ট কাউন্টার থেকে টেক্সী ভাড়া করে উঠে পড়লাম।এয়ারপোর্ট টেক্সি গুলো বিদেশী যাত্রীদের জন্য নিরাপদ।কারন তাদের সিরিয়ালি এয়ারপোর্টে নাম এন্ট্রি করা থাকে।তাই যাত্রীর সাথে কোন ধরনের প্রতারনা করার সাহস পায়না।আমরা যে টেক্সিতে উঠলাম প্রায় মধ্য বয়স্ক লোক।তার সাথে ইংরেজীতে কথোপকথন শুরু করলাম ।একাধিক বার তার দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করলাম।কিন্তু তিনি কোন কথাই বলছেন না।পরে বুঝতে পারলাম তিনি মোটেও ইংরেজী বুঝেন না।আমরা তার সাথে বার বার কথা বলার চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে তিনি তার মোবাইল ফোনে এক বন্ধুকে আমাদের কথা বলিয়ে দেন।তার বন্ধু ইংরেজীতে কথা বলতে পারেন।তাকে জানালাম আমাদের ব্যাংককের Sukumvit এ একটি ভাল হোটেল দেখে পৌছে দিতে হবে।Sukumvit হলো ব্যাংকক শহরের প্রানকেন্দ্র।বেশীর ভাগ পর্যটক এখানেই হোটেলে গুলোতে উঠে থাকেন।

আমাদের গাড়ী চলছে আর ফাঁকে ফাঁকে মোবাইলে চলমান দৃশ্যাবলী ভিডিও করে চলেছি।এদেশের প্রত্যেক টেক্সীতে সামনের অংশে ড্রাইভারের ID নাম্বার নাম সহ সব কিছু উল্লেখ করে একটি বোর্ড লাগানো থাকে।ভিডিওতে তাও তুলে রাখলাম।আমরা চলছি বটে কিন্তু মনে মনে সন্দেহ পোষন করে চলেছি এই ড্রাইভার আমাদের কোন ভুল যায়গায় নিয়ে যাচ্ছে কিনা।এজন্যে রাস্তার উপরে লাগানো সড়ক নির্দেশিকার উপর চোখ রেখে চলেছি।এক পর্যায়ে মনে হলো Sukumvit লেখা সড়কে না গিয়ে গাড়ী ভিন্ন পথে চলছে।রাস্তার পাশে বড়সড় দোকান দেখে ড্রাইভারকে অনেকটা ধমকের সুরে গাড়ী থামাতে বললাম।এই ফাকে মান্নান পুলিশ কথাটি একাধিক বার উল্লেখ করাতে ড্রাইভার তাড়াতাড়ি গাড়ী থামিয়ে দেন এবং ডেস্কবোর্ড থেকে একটা টেবলেট বের করে মুখে দিয়ে বার কয়েক পানি পান করতে থাকে।তাকে বেশ বিচলিত এবং কিছুটা নার্ভাস বলে মনে হল।

আমরা হ্যান্ড লাগেজ সহ গাড়ী থেকে নেমে রাস্তার পার্শ্ববর্তী দোকানের সামনে দাঁড়ালে দোকানের ভিতর থেকে একজন মধ্যবয়সী মহিলা বেরিয়ে আসেন ।তাকে ইংরেজীতে বুঝালাম আমাদের ড্রাইভারের সমস্যার কথা।মহিলা ইংরেজী বুঝেন এবং আমাদের বললেন চিন্তার কোন কারন নাই।এখান থেকে ৩০ মিনিটের পথ Sukumvit ।ইত্যবসরে গাড়ীর দিকে ফিরে থাকাতে দেখি ড্রাইভার ভাড়া না নিয়ে দ্রুত টান দিয়ে চলে গেল।এয়ারপোর্ট থেকে এই পর্যন্ত আসতে গাড়ীর মিটারে ২৩৫ বাথ যা প্রায় বাংলাদেশী ৭০০ টাকার মত উঠেছে।বোকা ড্রাইভার ভয় পেয়ে শেষ পর্যন্ত টাকা না নিয়ে আমাদের ফেলে চলে গেল।অগত্যা ওখান থেকে আরেকটি টেক্সী ভাড়া করে Sukumvit রওয়ানা হলাম।এভাবে নতুন এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে আমাদের ব্যাংকক ভ্রমন শুরু /------******--------*******--------*******--------******-----------++++++------++++++------
#গন্তব্য কুয়ালালামপুর-ঢাকা-চট্রগ্রাম :-
(মালয়েশিয়া-তথ্য:-মালয়েশিয়ার আয়তন ৩,২৯,৮৪৫ বর্গ কিলোমিটার যা বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশী।জনসংখ্যা ৩ কোটি বা বাংলাদেশর চেয়ে ৬ গুন কম।)

২০১৫ সাল কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকা ফিরছি ।সাথে ভাগিনা শেখ মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও তার পরিবার।আমরা একটু আগে ভাগে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট পৌছে গেলাম কিছু ক্রয়ক্রিত দ্রব্যের টেক্স ফেরত নেবার জন্য।মালয়েশিয়া সরকার বিদেশী পর্যটকদের জন্য টেক্স রিটার্ন এর সুযোগ রেখেছেন।অর্থাৎ যারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন করে কেনা কাটা করে দোকানীরা তাদেরকে টেক্স গ্রহনের আলাদা কাগজ দেয়।নিজ দেশে ফিরে আসার সময় চাইলে এয়ারপোর্টে কাউন্টার থেকে টাকা ফেরত নেয়া যায়।শর্ত হল এয়ারপোর্ট অতিক্রম না করা পর্যন্ত ক্রয়ক্রিত মালামাল অবিকল রাখতে হবে তবেই প্রদেয় টেক্স রিটার্ন পাওয়া যায়।
মালয়েশিয়া এয়ারপোর্ট অনেক বিস্তৃত।দৈর্ঘে প্রায় ১ কি:ম: হবে।এত বড় এয়ারপোর্টে কাজের প্রক্রিয়ার জন্য এয়ারপোর্টের অভ্যন্তরে ৩০ টি সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে কাউন্টারের নির্দেশিকা আছে আর প্রতিটির দুরত্ব প্রায় ৫০ গজ।এখান থেকে ট্যাক্সের অফিসটি খুঁজে নিতে আমাদের অন্ত:ত ৩০ মিনিট লেগেছে।অবশেষে ট্যাক্স প্রদানের উপযুক্ত প্রমান সহ মালামাল অফিসে প্রদর্শন করে বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১০,০০০/- টাকা ট্যাক্স ফেরত নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে বিমানে উঠে অপেক্ষায় আঁছি কখন বিমান ছাড়বে।
আমরা বোর্ডিং ব্রীজ দিয়ে বিমানে প্রবেশ করেছি তাই বাহিরের পরিবেশ খেয়াল করতে পারিনি ।কিন্তু বিমানে উঠে দেখলাম বৃষ্টি পড়ছে অঝোর ধারায় মুষল ধারে।যাকে ইংরেজীতে বলা হয় “Cats & Dogs” ।সেই সাথে প্রচন্ড বজ্রপাথ।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানি দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে যাই।অনেকক্ষন ধরে সব প্লেন উঠানামা বন্ধ।এভাবে প্রায় ঘন্টাখানেক প্লেনে বসে কেটে দিলাম।মনে মনে দু:শ্চিন্তা শুরু হলো নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকা থেকে চট্রগ্রামের কানেকটিং ফ্লাইট ধরতে পারব কিনা? কারন ২ ঘন্টা পর কানেক্টিং ফ্লাইট ।

ইতিমধ্যে ১ ঘন্টা সময় দেরী হয়ে গেছে।অবশেষে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে ক্যাপ্টেইন ফ্লাইট নিয়ে আকাশে উড্ডয়ন করে এবং যথারীতি সাড়ে ৩ ঘন্টায় বিমান ঢাকায় অবতরন করে।
প্রচুর যাত্রী ।আমরা কানেকটিং ফ্লাইটের কথা বলে আগে ভাগে ইমিগ্রেশনের প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত লাগেজ বেল্টে গিয়ে অপেক্ষায় আছি।কিন্তু লাগেজ আসতে কিছুটা দেরী করে ফেলে।ঘড়ির দিকে থাকিয়ে দেখি আর মাত্র ১৫ মিনিট সময় আছে ।লাগেজ নিয়ে খুব দ্রুত পায়ে হেটে ডমেস্টিক কাউন্টারে এসে দেখি কাউন্টার মাত্র ৫ মিনিট আগে বন্ধ করে ফেলেছে।প্রচন্ড মানসিক টেনশনে পড়ে গেলাম।মাত্র অল্প কয়েক মিনিটের জন্য চট্রগ্রাম গামী ফ্লাইট হাতছাড়া হয়ে গেল।বাড়ীর কাছে এসেও বাড়ীতে যেতে পারলাম না।
অগত্যা অনেক খোজাখুজি করে বিমানের সংশ্লিষ্ট এয়ারপোর্ট ম্যানেজারের অফিসে গিয়ে ঘটনা খুলে বলি এবং এতরাত্রে ফ্যামিলী নিয়ে কোথায় উঠব তা নিয়ে দুশ্চিনতার কথা বলে আমাদের সহযোগীতার অনুরোধ করি।তিনি এয়ারপোর্ট কন্ট্রোল রুমে লোক পাঠিয়ে বিমান দেরিতে আসায় আমরা কানেকটিং ফ্লাইট মিস করেছি আমাদের এই দাবীর সত্যতা খুঁজে পান ।সাথে সাথে তিনি সকালের প্রথম ফ্লাইটে আমাদের রি-কনফার্ম করে দেন এবং উত্তরায় বিমানের গেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্হা করে দেন ।অবশ্য গেস্ট হাউসে আমাদের অর্ধেক ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।তারপরেও বলব মন্দের ভাল।রাত কাটিয়ে পরের দিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে এয়ারপোর্টের দিকে রওয়ানা হলাম।প্রাকৃতিক কারনে আমাদের ভ্রমনের এই বিড়ম্বনাকে নিয়তি হিসাবে মেনে নিয়ে আত্নতুষ্টিতে বাড়ী পৌঁছলাম।
--------******----------******--------********---------********---------++++++----------++++++---------
#গন্তব্য দিল্লী থেকে কলকাতা:---
( ভারত-তথ্য:-আয়তন ৩২,৮৭,২৬৩ কিমি,বাংলাদেশের চেয়ে ২২ গুন বড়।লোকসংখ্যা ১২৫ কোটি যা বাংলাদেশের থেকে ৭ গুন বেশী।)

২০০১ সালে ভাতিজা তানিমকে (বর্তমানে নিউইয়র্ক প্রবাসী) সাথে নিয়ে ভারতের জয়পুর,আজমীর ও আগ্রা ভ্রমন শেষে দিল্লিতে ৩দিনের সফরের ২য় দিনে “কনোঘাট প্লেসের” একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে কলকাতা-চট্রগ্রামের দুটি বিমানের Ticket কিনতে যাই।আমাদের দিল্লী -কলকাতা যাত্রায় রাজধানী এক্সপ্রেসের Ticket করা আছে।কলকাতা পৌছে যেহেতু তারপরের দিনই আমরা চট্রগ্রামের পথ ধরব তাই আগে ভাগে দিল্লী থেকেই Ticket কিনে নিশ্চিন্ত হতে চাইলাম।বাংলাদেশ বিমানের নাম শুনে সেল্সম্যান যেন একটু নাক সিটকালেন।তখন বিমানের দেরিতে যাত্রা করাই ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার ।তাই এভিয়েশান মার্কেটে বিমানের যথেষ্ট দুর্নাম ছিল।বুকিং দিয়ে টাকা জমা করে দিলাম কিন্তু টিকেট দিতে পারলেন না প্রিন্টিং মিসটেকের কারনে।বললেন সকালে এসে টিকেট নিয়ে যেতে।যেহেতু আমাদের ট্রেন কাল বিকালে আর হোটেলও কাছাকাছি তাই সকালে এসে Ticket নিয়ে যেতে আপত্তি করলাম না।

যথারীতি তারপর দিন সকাল ১০ টার দিকে টিকেট নিতে এজেন্সিতে এসে দেখি বন্ধ।তার উপর হাতের লেখা একটি কাগজ ঝুলিয়ে আছে যেটাতে লেখা আছে মালিকের মায়ের মৃত্যুতে অফিস বন্ধ।লেখাটা পড়ে যেন মাথার উপর বাজ পড়ল ।কারন আজ বিকালে আমাদের ট্রেন যেটা মিস করার কোন সুযোগ নেই ।তার উপর হাতের টাকাও প্রায় ফুরিয়ে গেছে।কলকাতায় গিয়ে নতুন করে Ticket কিনব সেটাও ভাবতে পারছি না।তাছাড়া এখানে পরিচিত এমন কেউ নেই যে Ticket এর টাকা ফেরত নিয়ে আমাদের পাঠাতে বলব।আশে পাশের দোকানদারদের বলেও কোন সুরাহা করতে পারলাম না।এভাবে দুশ্চিন্তায় বেশ কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম।
অবশেষে দুপুরের Lunch সেরে শেষ বারের মত আবার দেখতে এলাম কিছু করা যায় কিনা।গিয়ে দেখি একজন লোক অফিস খুলছে।আমরা কাছে গিয়ে এই বিড়ম্বনার কথা বলতে গিয়েও আর বলিনি ।তিনি নিজে থেকে বললেন আমাদের আজ বিকালে কলকাতায় চলে যাওয়ার কথা তাদের মনে আছে সেই কারনে শুধুমাত্র আমাদের Ticket ডেলিভারী দিতে অফিস খুলেছেন।একেবারে শেষ মুহূর্তে টিকেট হাতে পেয়ে এত বিড়ম্বনার মাঝেও মনটা খুশীতে ভরে গেল।
--------*******--------*******--------*******-------*******----------+++++++----------++++++++-------
#গন্তব্য চট্রগ্রাম-জেদ্দা এয়ারপোর্ট-মক্কা :---
(সৌদি আরব-তথ্য:-আয়তন ২১,৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার যা বাংলাদেশের প্রায় ১৫ গুন।লোক সংখ্যা ৩কোটি ৩০ লক্ষ অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়েপ্রায় ৫ গুন কম।)
২০১৩ সাল।পবিত্র ওমরাহ হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে চট্রগ্রাম বিমান বন্দর থেকে সরাসরি জেদ্দার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ বিমানে উড়াল দিলাম।সাথে আমার বড় বোন এবং তাহার বড় ছেলে ভাগিনা ডা: বাবুল ও তার স্ত্রী।আমরা চট্রগ্রাম বিমান বন্দর থেকেই এহরাম পরিধান করেছিলীম যেহেতু আমরা প্রথমে গিয়েই পবিত্র ওমরাহ পালন করব।
বিমানে আমরা ছাড়াও আরো বেশ কিছু ওমরা যাত্রী সহ সর্বমোট প্রায় ৩০০ জন যাত্রী আছেন।তবে বেশীর ভাগ যাত্রীই বাংলাদেশী রেমিটেন্স যোদ্ধা সৌদি প্রবাসী।বিমান বন্দরের আনুষ্টানিকতা সেরে রাত দেড়টায় চট্রগ্রাম থেকে বিমান ছাড়ে এবং প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টা পর বিমান জেদ্দা এয়ারপোর্টে অবতরন করে।ভ্রমন পথে বিমান স্টুয়ার্ডদের আন্তরিক সেবার কোন কমতি ছিলনা। আমি সচরাচর প্লেনে কোথাও গেলে আকাশের দৃশ্য উপভোগ করি এবং কোন কোন দেশের উপর দিয়ে বিমান উড়ছে তা ম্যাপে দেখে জানালা দিয়ে নীছে দেখার চেষ্টা করি।রাতের আকাশ তাই বাহিরে দেখার সুযোগ ছিলনা।ভোরের আলো ফুটতেই আমরা জেদ্দা পৌছে যাই।
প্রায় ৫৩৯৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দীর্ঘ ভ্রমন শেষে ইমিগ্রেশনের লাইনে সবাই হড়োহুড়ি করে দাড়িয়ে পড়লাম।লাইনে আমরা কিছুটা পেছনে পড়ে যাই।ইমিগ্রেশন তখনও খোলেনি।লাইনে দাঁড়ানো অবস্হায় লক্ষ্য করলাম বাংলাদেশী কিছু লোক ক্লিনার হিসাবে এয়ারপোর্টের অভ্যন্তরে কাজ করছে।তারা কাছে এসে মোবাইল সিম বিক্রির কথা জানাল।তাদের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে দেশী ভাই হিসাবে ৪৫ রিয়াল দিয়ে একটি সিম কার্ড কিনে নিলাম।যাতে এয়ারপোর্ট থেকে সকলের সাথে সহযে যোগাযোগ করা যায়।এই সিম দিয়ে ১৫দিন আনলিমিটেড ইন্টারন্যাশনাল কল করা যায়।ইত্যবসরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে এসে পৌছে গেছেন।গায়ে এহরাম পরিহিত থাকায় ওমরাহ যাত্রী হিসাবে সবার আগে আমাদের আসতে ইশারা করলেন।ওমরাহ যাত্রী সাথে মহিলা তাই আমরা একটু ফেভার পেলাম।
ইমিগ্রেশনর কাজ সেরে পাসপোর্ট হাতে নিয়ে দ্রুত কাস্টমস চেকিং সেরে বাহিরে বেরিয়ে পড়তে উদ্যত হই।এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই সোজা মক্কার পথে রওয়ানা দেব যেহেতু আমাদের নেবার জন্য গাড়ী অপেক্ষা করে আছে।সুতরাং অনেকটা ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে না।কিন্তু আমাদের জন্য যে আরো বিড়ম্বনা তথা দূর্ভোগ অপেক্ষা করছে সেটা জানা ছিলনা। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীরা ইতিমধ্যে এয়ারপোর্ট এরাইভাল লাউঞ্জে ভীড় করতে শুরু করেছেন।এগিয়ে যেতে দেখলামগেট পেরিয়ে বের হবার একটু আগে কয়েকজন আরবী ভদ্রলোক হাতে পাসপোর্ট নিয়ে হাত উঁচু করে ডাকছেন-“ইয়াল্লাহ্ হাজী”-“ইয়াল্লাহ্ হাজী”।যারা ওমরাহ যাত্রী তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই তারা সবাইকে ডেকে চলেছেন। ওমরাহ হাজিরা সাধারণত এহরাম পরিধান করেই নিজ দেশ থেকে রওয়ানা হন।যেহেতু আমাদের এহরামের কাপড় পরিধান করা আছে তাই আমরা কাছে আসতেই একজন আমাদের কাছ থেকে সব পাসপোর্ট হাতে নিয়ে ইশারা করলেন অপেক্ষা করতে।
ব্যাপারটিতে আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।বুঝে উঠতে পারছিলাম না ইমিগ্রেশন,কাস্টম সবকিছু শেষ হওয়ার পরও কেন আবার আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে নিল।আর কেনইবা অপেক্ষায় রাখল।ইতিমধ্যে ভোর পেরিয়ে সকালও গড়িয়ে গেল।ইমিগ্রেশনের এত কিছু শেষ করতে যেয়ে দানা পানি কিছুই মুখে দিতে পারি নাই।সেই যে দেশ থেকে ফ্লাইটে উঠার প্রায় ৩ ঘন্টা পূর্বে এয়ারপোর্ট পৌছি।তারও ৩ ঘন্টা আগে ঘর থেকে বের হই।অর্থাৎ গতকাল সন্ধ্যা ৭ টা থেকে এখন সকাল ১১ টা প্রায় ১৬ ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম এখনও গন্তব্যে পৌছতে পারিনি।দুশ্চিন্তা না জানি আরো কতক্ষন লাগে।
ওয়েটিংয়ে গিয়ে দেখলাম এভাবে শত শত ওমরাহ যাত্রীকে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখেছে।যেহেতু আমরা আরবি ভাষা জানিনা তাই কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিনি।ইংরেজীতে তাদের খুব একটা দখল নেই।পার্শ্ববর্তী যাত্রীদের থেকে যা জানলাম তার সারমর্ম হল এই-এখন থেকে ওমরাহ যাত্রী যারা আসবেন তাদের ব্যাক্তিগতভাবে যেতে দেয়া হবে না।এদেশের যে কাফেলার নামে ভিসা লেগেছে সেই কাফেলার লোক সরাসরি মক্কায় হোটেলে পৌছে দিয়ে ম্যানেজারের জিম্মায় পাসপোর্ট হস্তান্তর করবে।এর আগে তারা পাসপোর্ট যাত্রীর হাতে দিবেনা।এ ব্যাপারটি আমাদের অজানাই ছিল।আমাদের নিতে যে ড্রাইভার গাড়ী নিয়ে এসেছে তাকে মোবাইলে কল দিয়ে ভিতরে নিয়ে আসলাম।তাকে ঘটনা সবিস্তারে জানালাম।তিনি কাউন্টারে গিয়ে ঐ ভদ্রলোককে বুঝিয়ে বললেন যে তিনি এখানকার রেসিডেন্স পারমিট নিয়ে আছেন এবং আমাদের নিতে এসেছেন।তার জিম্মায় আমাদের যেতে দেবার অনুরোধ জানালেন।কিন্তু তারা কিছুতেই রাজী হলোনা।অগত্যা ঐ ড্রাইভার আমাদের ফেলে ফের মক্কা চলে গেলেন।
আমরা অপেক্ষায় রইলাম কখন আমাদের ডাক পড়ে ।প্রায় আরো ঘন্টা খানেক পর এক পাকিস্তানী মিনি বাস চালককে সৌদি এজেন্সীর লোক আমাদের পাসপোর্ট বুঝিয়ে দিলেন এবং ইশারা করলেন সবাইকে তাকে অনুসরন করতে।দেশী বিদেশী প্রায় ১৫ জন যাত্রী নিয়ে ঐ পাকিস্তানী ড্রাইভার পবিত্র মক্কা নগরীর উদ্দেশ্যে আমাদের নিয়ে রওয়ানা দিলেন।কিন্তু আমি ফের আরও বেশী বিড়ম্বনায় পড়ে গেলাম।কারন আমার সহ যাত্রীরা অন্য গাড়ীতে অন্য এজেন্সির গাড়ীর সাথে।ব্যাপারটা হলো আমাদের ভিসা লেগেছে ভিন্ন দুই এজেন্সির রেফারেন্সে যা দেশ থেকে আসার সময় লক্ষ্য করিনি।পাসপোর্টের পেছনে এদের নামের মোহর লাগানো থাকে।মহান আল্লার অশেষ মেহেরবানীতে প্রায় ২ ঘন্টা পর জেদ্দা বিমান বন্দর থেকে পবিত্র নগরী মক্কায় পৌছলাম আর আমার সহ যাত্রীদের খুঁজে নিলাম একদিন পর।এভাবে দীর্ঘ ভ্রমনের বিড়ম্বনা তীক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো।
---------******---------*******--------*******---------*******----------++++++-------++++++++-------
# গন্তব্য হংকং থেকে চীন/শেনজেন :---
(চীন-তথ্য:--আয়তন ৯৫,৯৯,৯৬১ বর্গ কিলোমিটার যা বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় ৬৫ গুন বড়।জনসংখ্যা ১৪৪ কোটি যা বাংলাদেশের চেয়ে ৮ গুন বেশী।চীন পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ।)

ATAB(Association of Travel Agent of Bangladesh ) এর মার্কেটিং কনফারেন্স ১৯৯৬ সালে হংকং ও চীনের শেনজেন এ অনুষ্টিত হয়।প্রথম তিন দিনের হংকংয়ে ভ্রমন ও মার্কেটিং কনফারেন্স শেষে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য চীনের শেনজেন। শেনজেন চীনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বাণিজ্যিক ও পর্যটন নগরী।হংকং এর রাজধানী Kowloon শহর থেকে আমরা সবাই শেনজেনের উদ্দ্যেশ্যে সকালে ট্রেনে ছেপে বসলাম।ট্রেনটি সম্পূর্ন স্বয়ংক্রীয়ভাবে চালিত।কোন ষ্টেশন পৌছার একটু আগে স্বয়ংক্রীয়ভাবে লাউড স্পীকারে ঘোষনা আসে।যাত্রীরা আগে থেকে তৈরী থাকেন।ট্রেন দাড়ানোর সাথে সাথে সবাই নেমে পড়ে আবার অনেকে উঠে পড়ে।ব্যাপারটা এমন যেন ছোখের পলকে সব কিছু ঘটছে।ট্রেন গুলোর দরজা অনেক প্রশস্ত।।ট্রেন যখন থামে তখন বডি আার ফুটপাত সমান হয়ে যায়।অনায়াসে যে কেউ লাগেজ নিয়ে সহজে উঠানামা করতে পারে।তাই তত বেশী সময়ের প্রয়োজন হয়না। এভাবে কয়েক ষ্টেশন পার হয়ে প্রায় ৪০/৪৫ মিনিট পর আমরা চীনের সীমান্তের শহর শেনজেন এর কাছাকাছি পৌছে গেলাম।

এই সেই হংকং আর চীনের সীমান্ত পথ।মাঝখানে নদীর উপর একটা ব্রীজ দিয়ে সংযোগ তৈরী করা হয়েছে।আর এর উপরই বিশ্ব বিখ্যাত চলচিত্র অভিনেতা Bruce Lee এর সেই সাড়া জাগানো সিনেমা “Exit The Dragon,Enter The Tiger”এর স্যুটিং হয়েছিল যা আমি ছোটবেলায় পড়েছি আর মার্শাল আর্টের সেই বিখ্যাত সিনেমাটি দেখার সুযোগ ও পেয়েছিলাম।
সীমান্তবর্তী শহর হওয়াতে চীনের মানুষ হংকংয়ের প্রবেশদার হিসাবে শেনজেনকে বেশী ব্যবহার করে থাকে।প্রতি ৫ মিনিট অন্তর ট্রেন আসে আর হাজার হাজার মানুষ দূদিকের সীমানা পার হয়ে অনবরত আসা যাওয়া করে।দেখে মনে হবে যেন জনতার মিছিল। একটু পরে এখানে অবস্থিত চীনা ভিসা অফিসে আটাব নেতারা ভিসার আবেদন জানালে তারা ব্যাক্তিগত ভাবে ভিসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।উপরন্তু একসাথে অনেক বাংলাদেশীকে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে।কারন ইতিপূর্বে এতবেশী বাংলাদেশী ভিসা প্রার্থী তারা কখনো দেখেনি।এখানে একটি কথা আমাদের স্মরনে রাখা উচিত যে সময়ের কথা বলছি তখন চীন ছিল পূরোপূরী কম্যূনিস্ট শাসিত কনজার্ভেটিক সরকার।তখন চীনে প্রবেশের ক্ষেত্রে অনেক বেশী কড়াকড়ি ছিল।এভাবে ভিসার বিড়ম্বনায় আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেল।আমরা দেখছি আমাদের চোখের সামনে দিয়ে বিভিন্ন দেশের পর্যটকেরা অনায়াসে ভিসা নিয়ে নিয়ে ঢুকে পড়ছে কিন্ত আমরা অবহেলিত রয়ে গেলাম।

এক পর্যায়ে অনেক দর কষাকষির পর তারা আমাদের ১০ জন করে গ্রূপ ভিসা দেয়ার প্রস্তাব দেয়।কিন্তু আমাদের আটাব নেতারা তা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।কারন গ্রূপ ভিসার সমস্যা হলো সবাই একসাথে না ফিরলে পূনরায় হংকংয়ে ফিরে আসা যাবেনা।একই ট্রেডের ব্যবসায়ী হিসাবে বিষয়টির গুরুত্ব আমরা বুঝি।এভাবে ভিসার জটিলতায় আমাদের দিনের অধিকাংশ সময় মাটি হয়ে গেল।যেখানে আমরা দাড়িয়ে সেখানে খাবারের কোন হোটেল নাই।সারাটা দিন প্রায় অভূক্ত রয়ে গেলাম।এক পর্যায়ে একটি স্ন্যাক্স বারে ফ্রিজ ভর্তি আপেল পেলাম।প্রতি প্যাকেটে ৪টি বড় সাইজের আপেল ২০ হংকং ডলার। অগত্যা সবাই এক পেকেট করে নিয়ে আপেল দিয়েই দূপূরের Lunch সেরে নিলাম।একটু পরে খবর এলো তারা আমাদের ভিসা দিতে রাজী হয়েছে এই শর্তে প্রত্যককে নগদ ৫০০ ডলার দেখাতে হবে।কোন ট্রাভেলার্স চেক তারা গ্রহন করবে না।তার কারন পরের দিন সরকারী ছুটি।তাই চাইলেও কেউ এ চেক ভাংগাতে পারবেনা।যদিওবা অনেকের কাছে হাজার হাজার ডলারের ট্রাভেলার্স চেক ছিল।

আটাব নেতারা এ প্রস্তাব গ্রহন করলেন এবং সবাইকে এক স্থানে জড়ো করে অনুরোধ জানালেন প্রত্যেকের হাতে থাকা নগদ ডলার এক জায়গায় জমা করতে ।কার কত ডলার তা নোট করে রাখা হবে।চীনে প্রবেশ করে প্রত্যেকের ডলার ফিরিয়ে দেয়া হবে।উল্লেখ্য আমাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য চীনে বসবাসকারী বাংলাদেশী কয়েকজন শেনজেন সীমান্তে অপেক্ষায় ছিলেন।ভিসার ব্যাপারে তারাই মধ্যস্থতা করেন।শর্তানুযায়ী ১০ টি পাসপোর্ট সাথে ৫০০ ডলার করে প্রতিটিতে একসাথে ভিসা অফিসে জমা করা হয়। কিছুক্ষন পরে ভিসা ষ্টাম্পিং হলে ভিসা অফিসের লোক নাম কল করে ১০ জনকে সাথে নিয়ে সীমানা পেরিয়ে চীনে প্রবেশ করিয়ে তবে পাসপোর্ট হাতে দেয় যাতে একই ডলার পুনরায় ব্যবহার করা না যায়।এভাবে ১০ জন করে তারা ভিসা দিতে লাগলো।একই সাথে তাদের গোয়েন্দারা আমাদের উপর কড়া নজর রাখছিল।তাদের ধারনা ছিল নগদ এত ডলার আমাদের পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব হবেনা, তাই আমাদের অনেকে হয়ত ভিসা পাবেনা।

একটি প্রবাদ আছে চীনা বুদ্ধি ! কিন্তু আমাদের বাংগালী বুদ্ধি যে আরো বেশী প্রকট একটু পরের ঘটনায় তা বুঝা যাবে।আটাব নেতারা হিসাব করে দেখলেন যত নগদ ডলার আমাদের হাতে আছে এই প্রক্রিয়ায় অধিকাংশের ভিসা লাগলেও ৭/৮ জন ভিসা পাবেনা।কারন নগদ ডলার তখন ফুরিয়ে যাবে।তারা বুদ্ধি করলেন নেতৃস্থানীয় একজন এখানে থেকে যাবেন শেষের ৭/৮ জনকেও সাথে নেবার ব্যবস্তা করবেন।সর্বশেষ ভিসা প্রার্থীর দলনেতাকে বুঝিয়ে দিলেন ওপারের সুপার সপ থেকে কয়েক পেকেট বিস্কিট নিয়ে এর ভিতর নির্দিষ্ট কিছু ডলার দিয়ে সীমান্ত প্রহরীর মাধ্যমে এপারে অবস্থান কারী আমাদের ভাইদের জন্য যেন পাঠিয়ে দেয়া হয়।পেকেটে ডলার থাকবে এটা যেন তারা ঘূনাক্ষরেও বুঝতে না পারে।

যেই ভাবা সেই কাজ।দ্রত ওপার থেকে কথামত বিস্কিটের প্যাকেটে ডলার দিয়ে চীনা প্রহরীদের অনুরোধ করা হয় তারা যেন এপারে থেকে যাওয়া আমাদের অবশিষ্ট ভাইদের দয়া করে প্যাকেট গুলো পৌছে দেন কারন তারা ক্ষুধার্ত।উল্লেখ্য সীমানা ততবেশী দূরে নয়, চোখে দেখা যায়।মাঝখানে কয়েকশ গজ প্রশস্হ বড় আকারের একটি মাঠ।আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তারা ওপারে আমাদের ভাইদের কাছে বিস্কিটের প্যাকেট পৌছে দেয়।এদিকে ডলার ভর্তি পেকেট হাতে আসার সাথে সাথে সবাই তৎপর হয়ে উঠেন।দ্রুত ডলার সহ বাকী পাসপোর্ট ভিসার জন্য জমা করা হয়।এতে চীনা কর্তারা খুবই তাজ্জব বনে গেলেন । এই ডলার গুলো কোথা থেকে পেল এটাই তাদের প্রশ্ন।রীতিমত তারা জেরা করতে লাগলেন।কারন তারা ভেবেছিলেন বাকী এ কয়জন আজ চীন ঢুকতে পারবেনা সেটাই তারা চেয়েছিলেন।অনেক বাক বিতন্ডার পর তারা ভিসা দিতে বাধ্য হলেন।আমাদের অভ্যর্থনাকারী বাংগালী বন্ধুরা তাদের বুঝাতে সক্ষম হলেন যে সীমান্তবর্তী পরিচিত দোকান থেকে ডলার ধার করে এনেছেন আমাদের অবশিষ্ট ভাইদের জন্য।এভাবে বাংগালীর বুদ্ধির কাছে হার মানতে বাধ্য হলেন চীনারা।আর আমাদের বিড়ম্বনাও শেষ হলো বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে।
--------*******--------*******--------*********--------*******---------++++++---------++++++--------
#গন্তব্য কলম্বো--বেংগালোরো এয়ারপোর্ট :---
(শ্রীলংকা-তথ্য:-আয়তন ৬৫,৬১০ বর্গকিলোমিটার যা বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে অর্ধেক।জনসংখ্যা ২ কোটি ৩০ লক্ষ ।বাংলাদেশের চেয়ে ৭ গুন কম।)

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে সপ্তাহ খানেকের জন্য শ্রীলংকা বেড়াতে যাই।শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বো,সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রকৃতির ভূস্বর্গ বলে খ্যাত বিখ্যাত শহর কেন্ডি (Kendy) এবং সর্বশেষ “Adams Peak” তথা আদম (আ:) এর পায়ের চিহ্ন সম্বলিত আদমের পাহাড় চূড়া পরিদর্শন শেষে কলম্বো থেকে সরাসরি ভারতের বেংগালুরুর উদ্দেশে শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স এ যাত্রা করি।শ্রীলংকান এয়ারলাইন্সের সেবার মান নিয়ে আগেও অন্য এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছি এক কথায় অপূর্ব আতিথেয়তা।
এ মূহর্তের লিখার বিষয়বস্ত এয়ারপোর্ট এ ঘটে যাওয়া বিড়ম্বনা।তাই শ্রীলংকা ভ্রমনের বিস্তারিত এখানে উল্লেখ করলাম না।কলম্বো এয়ারপোর্ট থেকে প্লেন যথা সময়ে ছেড়ে পৌনে ২ ঘন্টার মধ্যে বেংগালুরু এয়ারপোর্ট পৌছে যাই।বেংগালুরু এয়ারপোর্ট বেশ পরিপাটি এবং সুন্দর পরিবেশ।আমরা প্লেন থেকে নেমে সরাসরি ইমিগ্রেশন এ লাইনে দাঁড়াবার অনেক আগে পথে সবাইকে একটি করে ইমিগ্রেশন ফর্ম ধরিয়ে দেয়া হয় যা আবশ্যিকভাবে প্রত্যেক আগমনকারী যাত্রীকে পূরন করে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে দিতে হয়।
এই ফর্ম পূরন করা অনেকের জন্য বিড়ম্বনার কারন হয়ে দাড়ায়।কারন কালে ভদ্রে এই ফর্ম পূর্ন করতে হয় বলে অনেকে ভুল করে ফেলেন।আবার অনেকে মোটেও লিখতে জানেন না।তখন তাদের কে অপরের সহযোগীতার দিকে হাত বাড়াতে হয়।ঠিক তেমনি এক কাতারের বয়স্ক ভদ্রলোক যিনি স্ব-স্ত্রীক কলম্বো হয়ে বেংগালুরু এসেছেন চিকিৎসার জন্য পড়েছেন এ সমস্যায়।তিনি আমার সহযোগীতা চাইলেন।যদিওবা তিনি ইংরেজী জানেন না আমার সফর সংগী মনছুর ভাই আরবী ভাষায় কথা বলতে জানেন।ঐ ভদ্রলোক মনছুর ভাইয়ের মাধ্যমে আমাকে তাদের ইমিগ্রেশন কার্ড দুটি ফিল-আপ করার অনুরোধ করেন।আমার ফরম পূরন শেষ হলে ভদ্রতার খাতিরে তাদের কার্ড দুটি পূরন করে দিই।ইতিমধ্য সবাই লাইনে দাড়িয়ে গেছেন।আমাদের ফ্লাইটটি আজকের জন্য সর্বশেষ ফ্লাইট।তাই তেমন লোকজনের ভীড় নেই।

কয়েকটি কাউন্টার মাত্র খোলা আছে।ইতিমধ্যে একে একে প্রায় সবার ইমিগ্রেশন শেষ ।শুধু আমাকে অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষায় রেখেছেন।ব্যাপারটা ঠিক কিছুই বুজতে পারছি না।ইমিগ্রেশনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা না বলাই ভাল।তাই আমি চুপচাপ লাইনে দাড়িয়ে আছি।অফিসারটি আমার পাসপোর্ট নিয়ে অনেকক্ষন ধরে উল্টে পাল্টে কি যেন দেখছেন সেই সাথে তার সামনে মনিটরে পর্যবেক্ষন করে আবার আমার দিকে তাকান।আমার ডাবল পাসপোর্ট ।এভাবে প্রায় ৩০ মিনিট পার হয়ে যায়।সব কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।আর তেমন কোন যাত্রী অবশিষ্ট নাই।অবশেষে তার কাছে জানতে চাইলাম আমার সমস্যাটা কোথায়?
তখন তিনি আমার পিতার নাম আর কেনইবা এই রুট ব্যবহার করে ভারতে আসছি তা জিজ্ঞেস করলেন।আমি আমার পিতার নাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম সওদাগর বলার সাথে সাথে এই ইব্রাহিম নামটি নিয়ে একাধিক বার কম্পিউটারে স্ক্রীনে বিভিন্ন নামের সাথে বা চেহারার সাথে আমাকে মেলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন যেটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।তখন আমি বুঝে গেছি ইব্রাহিম নামটি নিয়েই যত বিপত্তি।কারন আন্তর্জাতিক অপরাধী হিসাবে দাউদ ইব্রাহিম ভারতের কাছে একটি মূর্তিমান আতংক।আর আমি যে সময় ভারতে প্রবেশ করছি সে সময় কাস্মিরকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখী ।যুদ্ধ প্রায় অত্যাসন্ন। সে সময় ভারতীয়দের দেখে মনে হয়েছিল তাদের বেশীর ভাগই আতংকগ্রস্হ।এছাড়া আমার নামের আগে মোহাম্মদ শব্দ টাও যেন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।তাই বাড়তি নিরপত্তার প্রশ্নে অতিরিক্ত সতর্কতা বলা যায় যা আমাকে অনাকাংখিত বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলেছে।অবশেষে তিনি আমার পাসপোর্টে Arrival সীল মেরে দেন।এভাবে রাত ১০ টায় ইমিগ্রেশনের বিড়ম্বনা শেষ করে এয়ারপোর্ট টেক্সী নিয়ে বেংগালুরু শহরের দিকে রওয়ানা হলাম।
-------******--------*******--------*******--------********-----------++++++--------+++++++----------
(পাদটীকা:-বিভন্ন দেশে ভ্রমনে গিয়ে অনেক সময় নানান বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয় ।অভিজ্ঞতার আলোকে স্মৃতির এলবাম থেকে কিছু খন্ড চিত্র এখানে তুলে ধরলাম যাতে ভ্রমন পিপাসুদের কাজে লাগে।)
// আর কেউ যদি ভ্রমন কাহিনী গুলো পড়তে চান তাহলে আমার নিজস্ব একটা ব্লগ আছে ।নিম্নের সেই লিংকে গিয়ে পড়তে পারেন।ভ্রমন কাহিনী লেখা অব্যাহত থাকবে।Link as follows.......https://myblog.ostrichbd.com/wp .......//